পায়ের গোড়ালি ফাটা দূর করার উপায়: শীতের সময় আমাদের অনেকেরই পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যা রয়েছে। পায়ের গোড়ালি ফাটলে যেমন ব্যথা হয় তেমন পায়ের সমস্যাও নষ্ট হয়ে যায়। শীতে আমাদের পা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি শুষ্ক থাকে। তাই এই সময় পা’কে ফাটা থেকে বাঁচানোর জন্য পায়ের নিতে হবে বাড়তি যত্ন। আজকের আর্টিকেলে আমি আলোচনা করবো পা ফাটা দূর করার উপায়, পায়ের যত্ন এবং বিস্তারিত তথ্য। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে এবং আপনারা শেষপর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে সাথে থাকবেন।
পায়ের গোড়ালি ফাটা দূর করার ঘরোয়া সমাধান
সারাদিন পায়ের উপর অনেক অত্যাচার হয়ে থাকে।কিন্তু এই পায়ের কোনো যত্ন আমরা করিনা। এর ফলে আমাদের পা জীবানুতে আক্রান্ত হয় এবং একসময় ফেটে যায়। এর ফলে আমাদের পায়ের সৌন্দর্যও নষ্ট হয়ে যায়। আজকের আর্টিকেলে আমি নিয়ে এলাম এসব সমস্যার ঘরোয়া সমাধান।কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
নারিকেল তেল-
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে এক টেবিল চামচ নারিকেল তেল হালকা গরম করে নিন। তারপর তা ফাটা গোড়ালিতে লাগিয়ে মোজা পরে শুয়ে পড়ুন। এটি নিয়মিত ফলো করলে ১০ দিনেই আপনার পায়ের গোড়ালি নরম হবে এবং আগের চেয়ে উন্নত হবে।
গ্লিসারিন ও গোলাপজল-
আপনার পায়ের গোড়ালি যদি খুব বেশি ফেটে যায় তবে গ্লিসারিন ও গোলাপজল ব্যবহার করে তা খুব তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে পারেন। তিন চতুর্থাংশ গোলাপজল এবং এক শতাংশ গ্লিসারিন একত্রে মিশিয়ে নিবেন। এরপর তা পায়ের গোড়ালিতে লাগিয়ে রাখুন এবং কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
লেবুর রস–
একটি বড় গামলায় গরম পানি নিয়ে তাতে বডি ওয়াশ বা শ্যাম্পু এবং একটি লেবুর রস একত্রে মিশিয়ে নিন । এই পানিতে ১০ থেকে ২০ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পিউমিক পাথর বা গোড়ালি ঘষার পাথর দিয়ে গোড়ালি ঘষে নিন। এরপর গরম পানিতে ভালো করে পা ধুয়ে নিতে হবে। এরপর পা ভালো করে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
ওট ও জোজোবার অয়েল-
ওট মিল ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। আমার জোজোবা অয়েল ত্বককে ময়েশ্চারাইজার করে। ওট মিল পাউডারে জোজোবা অয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট মিশিয়ে নিন। তারপর গোড়ালির ফাটা অংশে কিছুক্ষণের জন্য এটি লাগিয়ে রেখে মৃদু গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
বেকিং সোডা-
বেকিং সোডা পায়ের গোড়ালি ফাটা সারিয়ে তোলার পাশাপাশি পায়ের দুর্গন্ধও দূর করে। ঠান্ডা পানিতে তিন চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য সেখানে পা ডুবিয়ে রাখুন। এরপর পিউমিক পাথর দিয়ে পা ঘষে পরিষ্কার করুন। এরপর পা ভালো করে ধুয়ে মুছে ফেলুন।
মধু-
মধু উৎকৃষ্ট মানে ময়েশ্চারাইজার এবং পা হাইড্রেট রাখে। পাশাপাশি ত্বকে পুষ্টিও জোগায়। পানির মধ্যে আধ কাপ মধ্যে মিশিয়ে তাতে কিছুক্ষণের জন্য পা ডুবিয়ে রাখুন। ২০ রাখার পর নরম তোয়ালে দিয়ে পা মুছে ফেলুন। কয়েকদিন এভাবে নিয়মিত করলে পা নরম এবং কোমল হবে।
অলিভ অয়েল-
অলিভ অয়েল দিয়ে কিছুক্ষণ পায়ের গোড়ালি ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে একদিন এটি করতে পারেন। এর ফলে গোড়ালি নরম হবে এবং কোমল হবে।
অ্যালোভেরা–
অ্যালোভেরায় ভিটামিন এ,সি এবং ই বিদ্যমান। পাশাপাশি এতে অ্যান্টি ভ্যাকটেরিয়া গুণও থাকে।
তাই ফাটা গোড়ালি সারিয়ে তুলতে বা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে অ্যালোভেরা বয়বহার করতে পারেন। ঈষদুষ্ণ পানিতে সাবান দিয়ে পা ভালোভাবে ধুয়ে নিন। পিউমিক পাথর দিয়ে পা ঘষতে ভুলবেন না। তারপর মোটা করে অ্যালোভেরা জেল আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিবেন। রোজ রাতে ঘুমানোর আগে এটি অনুসরণ করবেন। সকালে উঠে হালকা গরম পানি দিয়ে পা ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন।
চালের গুঁড়ো-
গোড়ালির মৃত ত্বক দূর করতে চালের গুঁড়ো বয়বহার করতে পারেন। প্রথমে একটি বাটিতে পরিমাণ মতো চালের গুঁড়ো নিবেন। এরপর সাথে মধু এবং অ্যাপল সাইডার ভিনেগার দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিবেন। এরপর তা ফাটা গোড়ালিতে ব্যবহার করবেন। আশা করছি এর দ্বারা পায়ের গোড়ালি ফাটা অনেকটাই সেরে যাবে।
পেট্রোলিয়াম জেলি-
ফাটা ঠোঁট থেকে শুরু করে ফাটা গোড়ালি এবং ত্বকের যেকোনো রুক্ষতা দূর করতে পেট্রোলিয়াম জেলির জুড়ি নেই। এরজন্য প্রথমে হালকা গরম পানিতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। এমন করলে পায়ে শুষ্ক রুক্ষ ত্বক নরম হয়ে যাবে।
এরপর পিউমিক পাথর দিয়ে পা ঘষে ভালোভাবে ধুয়ে মুছে নিন। পা পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর পেট্রোলিয়াম জেলির সাথে দুই ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে তা আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিন। রাতে ঘুমানের আগে এটি করতে পারেন। পেট্রোলিয়াম জেলি লাগানোর পর পায়ে মোজা পরে ঘুমিয়ে পড়ুন এবং সকালে উঠে ঠান্ডা পানি নিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
পাকা কলা–
প্রথমে একটি বাটিতে দুটি পাকা গলা পেস্ট বানিয়ে নিবেন। এরপর তা আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ রাখার পর ঈষদুষ্ণ পানির দ্বারা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত লাগালে পায়ের গোড়ালি ফাটা ভালো হয়ে যাবে।
পায়ের যত্ন
পায়ের যত্ন সম্পর্কে আমরা সকলেই উদাসীন। এর ফলে আমাদের পা আক্রান্ত হচ্ছে পা ফাটা সহ নানান সমস্যায়। এই সমস্যা গুলো থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই পায়ের যত্ন নিতে হবে।
-
পায়ের ভালোভাবে যত্ন নিন।
-
পা সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
-
বাসায় থাকলে চটি পড়ে থাকুন।
-
গোসলের সময় পিউমিক পাথর দিয়ে পা ঘষুন। ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে রাখতে পারেন।
-
বর্ষাকালে বাহির থেকে ফিরলে ভালোভাবে পা ধুয়ে নিন। কারণ এই সময়টায় পায়ে ইনফেকশন হতে পারে৷
-
মধুমেহ আক্রান্ত রোগীদের পায়ের সমস্যা হতে পারে। তাই পায়ের যত্ন নিন।
-
ফাটা গোড়ালির সমস্যায় ভুগলে সঠিক মাপের এবং আরামদায়ক জুতো পরুন।
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেল এই পর্যন্তই। আর্টিকেলে বর্ণিত নিয়ম গুলে অনুসরণ করলে আপনারা পা ফাটা রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।